এরশাদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে
এরশাদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ
এরশাদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (১৪ জুন) সকাল ৭টা
৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছেন বলে
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এখবর প্রকাশ করে।

যে রোগে তিনি মৃত্যু বরণ করেন

গত ২২ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন এরশাদ। তিনি হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও
কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)
লাইফসাপোর্ট ছিলেন এরশাদ।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এই নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল
হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর আগে এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানান তার ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছিলেন, তিন দিন ধরে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের শারীরিক
অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। চিকিৎসকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী শারীরিক উন্নতি হচ্ছে না তার। এরশাদের
ফুসফুসের সংক্রমণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী কিডনি কাজ করছে না, এ কারণে তার
শরীরে কিছুটা পানি জমেছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে
চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি
লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব
পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে
পদোন্নতি লাভ করেন, ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর
উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়
এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

এরশাদের দেশ শাসন কাল

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি
আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর
মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর তিনি
রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে
জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬
সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের
৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

রাজনীতির সর্বশেষ

২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়।
এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮
সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের
নেতা ছিলেন।

এরশাদের জানাজা

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জানাজা ৪ স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর
শিকদার লোটন।

তিনি বলেছেন, ‘মোট চারটি স্থানে তাঁর (এরশাদ) জানাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রথমে ক্যান্টনমেন্টে,
এরপর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, তারপর রংপুর নেওয়া হবে। রংপুরের জানাজার পরদিন জাতীয় ঈদগাহে
জানাজা শেষে সামরিক করবস্থানে দাফন করা হতে পারে। যদি পূর্বের সিদ্ধান্তে কোনো রদবদল না হয়।
দাফনের আগে কোনো এক সময় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হতে পারে।’

মৃত্যুর খবরে রওশনের প্রতিক্রিয়া

এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সিএমএইচে ছুটে যান। তার সঙ্গে ছেলে রাহগির আল
মাহি এরশাদও (শাদ এরশাদ) ছিলেন। এরশাদের আরেক ছেলে এরিক এরশাদ রয়েছেন বারিধারায় তার বাড়ি
প্রেসিডেন্ট পার্কে। এরিকের মা বিদিশার সঙ্গে প্রায় দেড় দশক আগে এরশাদের বিচ্ছেদ ঘটে।

এরশাদের শেষ কৃতের ব্যাপারে বিদিশার বক্তব্য

গত মঙ্গলবার এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্যারকে রংপুরে সমাহিত করার
ব্যাপারে রংপুরের প্রতিটি মানুষ একমত। আমিও তাদের অনুভূতির সাথে একমত পোষণ করছি। আর যেহেতু
পল্লী নিবাসটি স্যার এরিখ এরশাদকে দিয়ে গেছেন সেহেতু তাকে পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হলে এরিখ সবচেয়ে
সম্মানিত হবে। রংপুরের মানুষের অনুভূতিকে এরিখ সম্মান জানাবে।’

যে কবরস্থানে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন এরশাদ

এরশাদ তার পরিবার ও দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফনের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু।

আরো পড়ুনঃ স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, আ. লীগ নেতার কারাদণ্ড

Leave your comments