করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেহাল দশা হয়েছে।ধুলোর আস্তরণ আর মাকড়সার জ্বালে ঢাকা পরেছে ক্লাসরুমগুলো।মরিচা ধরেছে কল-কবজা আর দরজার জানালায়।অযত্ন আর অবহেলায় প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র এবং বইপত্রগুলোও নোংড়া হয়ে গেছে।মাঠ জুড়ে লম্বা ঘাস, আগাছা, আবর্জনা আর পচে যাওয়া লতাপাতাসহ ভাঙা গাছের ডালপাতায় ভরে গেছে। সরকারি নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকায় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ যত্ন না নেয়ায় এমন ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি অভিভাবকদের।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।বিদ্যালয়গুলো সার্বক্ষণিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় এজন্য পরিদর্শন কর্মকর্তা নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন। এই বিষয়ে শিক্ষকদেরও অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। এরপরেও যদি কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উল্লেখ্য, জেলায় নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৭৪টি। এরমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ৮৯টি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০টি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫৪টি এবং স্কুল এন্ড কলেজ ২১টি। এছাড়াও ২২২টি মাদ্রাসা ও ৬১টি কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ১০টি এবং বেসরকারি ৫১টি।
সরজমিনে জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়,কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্যোগে টিনসেড বেঁকে গেছে। মাকড়সার জ্বাল, ধুলো, পোকা-মাকড়ে ছেয়ে গেছে শ্রেণীর কক্ষগুলো।কক্ষের দরজার নিম্নতলেও মরিচা ধরেছে।এতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ প্রায় বিপন্নের পথে।অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, ক্লাস রুমে বৃষ্টির পানি পড়ে বেঞ্চ ও মেঝে নষ্ট হয়ে গেছে।অপরিষ্কার আর অবহেলায় পড়ে আছে সবকিছু।এমন অবস্থায় স্কুল খুললে ক্লাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
রুমের অবস্থা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।
আবার অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও জানান,সরকার স্কুলের উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর বাজেট দেয়।কিন্তু শিক্ষকরা সেটি ঠিকভাবে কাজে লাগান না।ফলে এমন করুণ দশা হয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের নোংরা অবস্থার পাশাপাশি ওয়াশব্লক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। টয়লেট ও বেসিন ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে।মনে হয় দীর্ঘদিন এখানে কোনো মানুষের পা পড়েনি।
কিছু স্কুলের নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, সরকারের স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।কিন্তু স্কুলের ক্লাস রুম ও টয়লেটের যে অবস্থা তাতে করে বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।স্কুল খোলার আগে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা দরকার।
এ ব্যাপারে কিছু প্রধান শিক্ষক এবং সহকারি শিক্ষকরা জানান, আমরা নিয়মিতভাবে স্কুলে আসি।পরিস্কার পরিচ্ছন্নও করা হয়ে থাকে। তারপরও স্কুল খোলার পূর্বে আমরা স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে শ্রেণী কক্ষগুলো পড়াশুনার উপযোগী করে তুলবো।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।সরকারের নির্দেশনা পেলেই বিদ্যালয় খোলার এক সপ্তাহ আগেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পাঠদান উপযোগি করে তোলা হবে।
Leave your comments