কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ কেন বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সরকারি বরাদ্দসহ বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এবং বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ নোটিশ পাঠিয়েছে মাউশি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপপরিচালকের কার্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চলের দাফতরিক নির্দেশনায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা পান সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা।
ডিইও জানান, তদন্তে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কাজের শুরুতে প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষণিক কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তার কাছে অভিযোগের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে তিনি দুই দফা সময় আবেদন করেন। কিন্তু পুনর্নির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র জমা না দিয়ে উল্টো তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
ডিইও আরও বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তে সহযোগিতা না করে সরকারি আদেশ অমান্য ও সরকারি কর্মকর্তাকে অবজ্ঞা করেছেন।এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ কেন বন্ধ করা হবে না তার ব্যাখ্যা আগামী দশ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদফতরে দাখিলের জন্য নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।’
এর আগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে উলিপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে অসহযোগিতা করেন প্রধান শিক্ষক। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২০০৪ সালের ৫ নং আইন (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠায় জেলা প্রশাসন। তবে এখনও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনও তদন্ত শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবক মহল।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার জানান, তিনি এখনও নোটিশ পাননি। তবে বরাবরের মতো তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ কমিটি করে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নিরীক্ষণ কমিটি তদন্ত করে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার ও সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ এবং বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বর্তমান সভাপতি কার্যকর কোনও ব্যবস্থা না নিলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও নিরীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক হযরত আলী উপজেলা প্রশাসন এবং উপপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।

Leave your comments