রূপালী আক্তার নীপা (২০) পেশায় গৃহকর্মী। এলাকার পূর্বপরিচিত যুবকদের সঙ্গে মিশে একবছর আগে থেকে ইয়াবা সেবন শুরু করে।ইয়াবার টাকা জোগাতে জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ে।যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত, সেই বাসা থেকে নানা অজুহাতে বেরিয়ে ছিনতাই এবং ইয়াবা সেবন করে আবার ফিরে যেতেন।একপর্যায়ে এমন বেপরোয়া হয়ে গেছেন, গত দুইদিনে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে দু’জনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করেন।শেষ পর্যন্ত কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন নীপা,সঙ্গে আরও দু’জন।গ্রেফতারের পর নীপা ইয়াবার টাকা জোগাতে গৃহকর্মী থেকে ছিনতাইকারী দলে নাম লেখানোর এই তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন।ছিনতাই করা দু’টি মোবাইল সেট চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডে বিক্রি করতে এসে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাতে গ্রেফতার হয় নীপা ও তার এক সহযোগী যুবক।ছিনতাই করা মোবাইলের ক্রেতাকেও এসময় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা।নীপার সঙ্গে গ্রেফতার দু’জন হলেন- রাকিবুল হাসান রাকিব (২৫) ও মো.আলাউদ্দিন (৫০)।কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গত সোমবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যালয়ের সামনে অরবিন্দু দত্ত (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করে নীপা ও রাকিব।এর আগে নগরীর জামালখান এলাকায় একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে।পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর চকবাজার এলাকায় একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে। এরপর রাত ৮টার দিকে চকবাজার থানার সার্সন রোডের মুখে রাজু আহাম্মদ নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করে।ওসি মহসীন বলেন,অরবিন্দু দত্তকে ছুরিকাঘাতের দৃশ্য সিসি ক্যামেরা থেকে আমরা সংগ্রহ করি।সেখানে দেখা যায়,রাকিব ছুরি মারছে, নীপা তাকে ধরে রেখেছে।তাদের সন্ধানে নেমে আমরা খবর পাই যে, স্টেশন রোডে সোমবার রাতে দুইবার এক ছেলে ও এক মেয়ে গিয়ে ‍দু’টি মোবাইল সেট একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেছে।সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে আমরা মোবাইলের ক্রেতা আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করি।পরে নীপা ও রাকিবকে ধরার জন্য কৌশল অবলম্বন করি।মঙ্গলবার রাতে তারা আবারও মোবাইল বিক্রির জন্য গেলে তাদের আটক করি।এরপর তারা জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরিচয় জানায় এবং সবকিছু স্বীকার করে।গ্রেফতার নীপা সাংবাদিকদের জানান, ভাসমানভাবে বেড়ে ওঠা নীপা দীর্ঘদিন নগরীর বগার বিল এলাকায় থাকতেন।রাকিবও একই এলাকার।তারা পূর্বপরিচিত।নীপা আরেক ছিনতাইকারী শাহআলমকে একবছর আগে বিয়ে করেন।তবে বিয়ের পর থেকে শাহআলম জেলেই আছেন।আর নীপা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন নগরীর দিদার মার্কেট এলাকার ফারুক টাওয়ারে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের এক বিচারকের বোনের বাসায়।অরবিন্দু দত্তকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নীপা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মার্কেটে যাবার কথা বলে নীপা বাসা থেকে বের হয়।ফোনে যোগযোগ করে রাকিব ও রাশেদ নামে দু’জনের সঙ্গে।তারা দেওয়ানবাজারে আসার পর তিনজন মিলে ৩০০ টাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা একঘন্টার জন্য ভাড়া করে। প্রথমে জামালখানে একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে স্টেশন রোডে গিয়ে ২৬০০ টাকায় সেটি বিক্রি করে।এরপর আরেকটি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে আন্দরকিল্লা দিয়ে এসে রহমতগঞ্জ কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে থেকে অরবিন্দু দত্তকে অনুসরণ করা শুরু করে।অরবিন্দু ঢালু সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে ওঠার সময় রাকিব ও নীপা নেমে তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে মোবাইল দেওয়ার জন্য বলেন।কিন্তু অরবন্দিু রাকিবকে জাপটে ধরে ফেলার পর তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে আবারও অটোরিকশা করে স্টেশন রোডে চলে যায় তারা।ঘটনার সময় রাশেদ অটোরিকশা চালকের পাশে বসে তাকে নজরদারিতে রেখেছিল।সেই মোবাইল তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে।নীপা ও রাকিব ২ হাজার টাকা করে পায় এবং রাশেদকে দেওয়া হয় ১৬০০ টাকা।এরপর তিনজন মিলে ৬টি ইয়াবা কিনে নগরীর দেওয়ান বাজারে একটি নির্মাণাধীন ভবনে যায়সেখানে ইয়াবাগুলো সেবন করে নীপা ফিরে যায় যেখানে কাজ করেন সেই বাসায়।পরদিন সন্ধ্যার দিকে আবারও ‘একটু আসছি’ বলে বের হয়ে নীপা রাকিব ও রাশেদের সঙ্গে মিলে ছিনতাই করে।একবছর আগে বগার বিল এলাকার পরিচিত সাগর আমাকে প্রথম ইয়াবা খাওয়ায়।এরপর আমি এলাকার মামুন-ইরফানদের সঙ্গেও ইয়াবা খেয়েছি।একবছরে ১৫ বারের মতো আমি খেয়েছি।তবে ইয়াবা খেয়ে বাসায় গিয়েও আমি কখনো খারাপ আচরণ করিনি।এজন্য কেউ বুঝতে পারেনি।রাকিব-রাশেদরা সবসময় ইয়াবা খায়।সেদিন ঘটনার (অরবিন্দুকে ছুরিকাঘাত) আগেও দু’জন ইয়াবা খায়।পরে আবার আমরা একসাথে ইয়াবা খায়।শুধুমাত্র ইয়াবার টাকার জন্যই আমি তাদের সঙ্গে মিলে ছিনতাই করেছি।গ্রেফতার রাকিবের বিষয়ে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, রাকিবও মাদকাসক্ত।দিনে তার অন্তত ৬টি ইয়াবা লাগে বলে আমাদের জানিয়েছে।ইয়াবার টাকা জোগাতে গত একবছর ধরে সে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে।একবছর আগে সকালে প্যারেড কর্ণারে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়া এক লোকের মোবাইল চুরির পর তার গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল।এরপর সে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়।কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।রাকিব ও নীপা এতটাই আসক্ত যে, গত দুইদিনে আশপাশের এলাকায় চারটি ছিনতাই ও দুটি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটায়।হিতাহিত জ্ঞানশূন্য না হলে কোনো ছিনতাইকারী একই এলাকায় একাধিক ছিনতাই করে না।অরবিন্দু দত্তকে এমনভাবে বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে,আরেকটু হলে ফুসফুসে আঘাত লেগে তার মৃত্যু হত।রাজুকে এলোপাতাড়িভাবে সাতটি ছুরিকাঘাত করেছে রাকিব।রাকিব-নীপার সহযোগী রাশেদকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন নোবেল চাকমা।গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেওয়া কোতোয়ালী থানা

Leave your comments