কুড়িগ্রামে উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুর বিরুদ্ধে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের টিআর ও কাবিটা সোলার প্রজেক্টের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্তটীম।
টিআর কাবিখা কাবিটা ও ত্রান সহ সরকারের নেয়া সামাজিক সুরক্ষা সেবা নিয়ে ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতা কর্মীদের প্রত্যক্ষ মদদে বিভিন্ন সময় দূর্নীতি অনিয়মের কথা জোরে সোরে প্রচার পেলেও এবার প্রকাশ্যে খোদ উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাঃসম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুর বিরুদ্ধে কোটি টাকার  প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে এমনকি বুদ্ধি ও শারিরিক প্রতিবন্ধি মানুষদেরও উপকারভোগীদের তালিকায় নাম দিয়ে তাদের সেবা বঞ্চিত করে পুরো অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ তদন্তকমিটি  দারা প্রমানিত হওয়ার খবরে পুরো উপজেলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা যায়, গত ২০১৮- ২০১৯ইং অর্থবছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের অধীন কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সোলার সিস্টেমসমুহ অনুমোদিত তালিকা মোতাবেক বিতরন না করে পুরো বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ এনে জনৈক জয়নাল আবেদীন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। দূর্যোগ অধিদপ্তর  অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ১৩-০১-২০২০ইং কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে ও পরবর্তী আরও কয়েকটি প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মাধ্যম হয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। গত ১৭ই এপ্রিল ২০২০ ইং উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত)  স্থানীয় সরকার শাখা কুড়িগ্রাম  মোঃ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন সোলার সিস্টেমের পুরো প্রজেক্টের অর্থ উপকারভোগীদের বরাদ্দ না দিয়ে পুরো অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানের কথা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেন।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা  দীলিপ কুমার রায় ১৮-০২-২০২০ ইং পত্রমূলে, উলিপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সিরাজ উ দৌলা এবং অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক  আমিনুল ইসলাম কে সাথে নিয়ে উপজেলার ধরনীবাড়ির তালিকাভুক্ত প্রতিটি উপকারভোগীদের বাড়ি বাড়ি তদন্ত করেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ধরনীবাড়ির কোথাও একটি সোলার সিস্টেম কোন উপকারভোগী পেয়েছে তা প্রমান হয় নি।
কাবিটা  সোলার সিস্টেমের প্রায় ২২ টি প্রকল্পের  ৫৭,৮৩, ১৩১ টাকা এবং টিআর কর্মসূচীর আওতায় ২৫ টি প্রকল্পে  প্রায় ৩৭,১২,৩৫১ টাকার প্রকল্প উপজেলা পরিষদের সুপারিশক্রমে  জেলা কর্নধার কমিটি অনুমোদন দেয় বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। তদন্ত কমিটি আরও উল্লেখ করে যে, পুরো নথি ও প্রকল্প পুংখানুপুংখ নিরিক্ষম ও পরীক্ষা করে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেম মন্টুর অর্ঘ আত্মসাতের অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হয়েছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায় দক্ষিন  মধুপুরের মৃত জামাল উদ্দিনের শারিরিক প্রতিবন্ধি ( হাত ও পা নাই) পুত্র হযরত আলীর নামে বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে তিনি সে সেবা পাননি, কিসামত মধুপুরের মোঃ রবিউল ইসলামের প্রতিবন্ধি সন্তান সুজন মিয়ার নাম তালিকায় থাকলেও তিনিও বঞ্চিত হয়েছেন। কিসামত মধুপুর এলাকার ফজলুল হকের পুত্র আলমগীর হোসেনের নামে উপকারভোগী তালিকায় নাম আছে কিন্তু তিনিও সোলার প্যানেল পাননি। এভাবে এ প্রতিবেদকও তালিকা ধরে বেশকিছু এলাকা ঘুরে কোন উপকারভোগী মানুষ পাননি যারা এ কর্মসূচীর আওতায় সেবা গ্রহন করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ১৭-০৫-২০২০ ইং স্বাক্ষরিত তার অফিস পরিপত্র ৩২ নং স্মারক ও ৩৩ নং স্মারক মুলে উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর বিরুদ্ধে আনীত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হয়েছে মর্মে মহাপরিচালক, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মহাখালী ঢাকা প্রেরন করেছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। এছারাও অনুলিপি প্রেরন করেছেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার রংপুর ও পরিচালক ( কাবিখা) দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালী ঢাকা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম তদন্ত কমিটির ১৩ পাতা রিপোর্ট ও তথ্যাদি  নথিভুক্ত করে তা পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।
Leave your comments