টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় নদীভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বর্ষার শুরুতেই কুড়িগ্রামের বহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমার, কামারপাড়া, কালুয়া, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, চতুরা, সদর উপজেলার মোগলবাসা, উলিপুরের গুনাইগাছ এবং চিলমারী উপজেলার কাচকোল ও পুঁটিমারীর সাহেবের আলগা গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরো হাজারো ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা বাড়ির দেয়াল ভেঙে ইট বের করে তা সরিয়ে নিচ্ছেন মৃত সিরাজুলের ছেলে মোস্তফা। অন্যদিকে ধীরে ধীরে নদী গিলে খাচ্ছে তার বসতভিটা। এরই মধ্যে তার ভিটামাটির অর্ধেকটাই চলে গেছে ধরলা নদীর গর্ভে। শুধু মোস্তফাই নয়, ওই গ্রামের অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা জোসনা বালা জানান, এরই মধ্যে তার বাড়ি ধরলার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন থাকার জায়গাটুকুও তার নেই। স্থানীয় মেম্বার বা চেয়ারম্যানও কোনো সহযোগিতা করেননি।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাবলু সরকার জানান, পাঁচ বছরে এ এলাকার অন্তত ২০০ বাড়ি কয়েকশ একর ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। একাধিকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কাজ হয়নি। কিন্তু এবার নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী থেকে এক কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। কিন্তু সেখানেও ভাঙন চলে এসেছে। বাগানের আম, কাঁঠাল ও সুপারির গাছ কাটা শুরু করেছি। এখন আমাদের একটাই দাবি, যে করেই হোক, সরকার যেন আমাদের নদীভাঙন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারের ভাঙনকবলিত এলাকাও। যাদের বাড়ি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর যাদের বাড়ি ভাঙছে তারা দিশেহারা হয়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা রক্ষার চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার বড় নদ-নদীগুলোর ১৫টি স্পটে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা তিনটি স্পটে ইমারজেন্সি ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি। বাকি স্পটগুলোয়ও দ্রুত কাজ শুরু হবে।
প্রতি বছর জেলায় নদ-নদীর ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। আর যাতে কোনো পরিবারকে নিঃস্ব হতে না হয়, সেজন্য ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার—এমনটাই প্রত্যাশা নদীপাড়ের মানুষের।
Leave your comments