কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় মোট ৪৬টি ইটভাটা রয়েছে।এর মধ্যে একটি অনুমতিহীন, এছাড়া ১১টি ইটভাটার লাইসেন্স নেই।তারা হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।এর মধ্যে রৌমারী উপজেলায় গড়ে তোলা অনুমতিহীন ইটভাটাটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।এসব ইটভাটার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে।ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে কেউ তিন থেকে পাচ বছরের জন্য ইটভাটা গড়ে তুলেছেন।কৃষি জমিতে গড়ে তোলা ইটভাটার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা অভিযোগ করেন,ভাটা চালুর পর থেকে তাদের জমির ফসল অনেকটাই কমে গেছে।তাছাড়া আগে গাছে যে পরিমাণ ফল বা সুপারি হতো সেটাও কমে গেছে। তারা দাবি করেন,সরকার কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে না তোলার নির্দেশ দিলেও ভাটা মালিকরা বেশি লাভের আশায় এলাকার কিছু অসাধু মানুষের সঙ্গে যোগসাজস করে ইটভাটা গড়ে তুলছে।অন্যদিকে ইটভাটার মাটি যোগান দিতে টাকার বিনিময়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে আবাদী জমির ওপরের অংশের মাটি।এতে করে জমির উর্বরা শক্তিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এদিকে ভাটা মালিকরা বলছেন,দেশের উন্নয়নের কাজ ও মানুষের ঘর-বাড়ি তৈরিতে চাহিদার কারণে তারা ইটভাটা গড়ে তুলেছেন।জেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো ভাটায় ইট তৈরির জন্য মাঠ পরিষ্কারসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে।আবার কয়েকটি ভাটায় ইট তৈরির পাশাপাশি শুরু করেছেন ইট পোড়ানোর কাজও।কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকায় নির্মিত এমএমবি ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিক মোতালেব বলেন,কেবল মৌসুম শুরু হয়েছে।আমরা এখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করি।প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা পর্যন্ত পাই।সম্প্রতি জেলার রৌমারী উপজেলার নলবাড়ি গ্রামে স্থাপিত মেসার্স ‘বাবা মায়ের দোয়া ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটার কর্যক্রম বন্ধ ও কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে চিঠি পেয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস এর মাধ্যমে ১০ দিন সময় বেঁধে দিলেও সরকারী নিয়ম-নীতি বা আইনের তোয়াক্কা না করেই এখনও ইটভাটার কার্যক্রম চালু রেখেছেন ভাটা মালিক।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঐ ইটভাটার মালিক ২০১৯ সালে ইট প্রস্তত করার উদ্দেশ্যে জনবসতিপূর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে মেসার্স বাবা মায়ের দোয়া ব্রিকস স্থাপন করেন এবং ইট প্রস্তত ও পোড়ানোর কাজ শুরু করেন।এবার চলতি মৌসুমের শুরুতে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি মারফত নির্দেশ প্রদান করেন।কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই ইটভাটা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন ভাটার মালিক।রৌমারীর নলবাড়ি গ্রামের মমিন ও হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় যে জমিতে বছরে তিন বার ফসল উৎপাদন হয় সেই ফসলী জমিতে ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে।ভাটার কালো ধোঁয়ায় ধান চিটা হচ্ছে,গাছের ফল পাক ধরছে না।ইটভাটার কালো ধোঁয়া, ছাই, ইটের গুঁড়া এবং ভাটার ধুলাবালি বাতাসে মিশে কৃষিজমির ফসল ও গাছপালা নষ্ট করে ফেলছে।ফলে আমরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।কৃষিজমি থেকে দ্রুত ইটভাটা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩৪টি লাইসেন্স প্রাপ্ত ইটভাটার পাশাপাশি ১১টি ইটভাটা কোর্টে রিটের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে।আর রৌমারী উপজেলার একটি ইটভাটা লাইসেন্স না নিয়েই কার্যক্রম শুরু করে।এ বছর আরো নতুন তিনটি ইটভাটার আবেদন জমা পড়লেও তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।তবে এসব ইটভাটার চিমনীর মাপ ঠিক রেখে এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কি না কুড়িগ্রাম জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অফিস না থাকায় তা জানা সম্ভব হয়নি।কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, আইনের বাইরে কোনো ইটভাটার মালিককে ছাড় দেওয়া হবে না।বিশেষ করে ইটভাটার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।যাতে করে কেউ আইনের বাইরে কিছু করতে না পারে।

Leave your comments