কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের টেন্ডার দূর্নীতি, বদলী স্থগীত সহ নানা বিষয়ে অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। একাধিকবার তার বদলির আদেশ স্থাগীত নিয়েও রয়েছে নানান রটনা। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও আশরাফ মজিদ কুড়িগ্রাম জেলারেল হাসপাতালে রয়েছেন দাপটের সাথে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশরাফ মজিদের বিষয়ে অসহায়।
চলতি বছরে মার্চ মাসে আশরাফ মজিদের প্রশাসনিক বদলি হয় রাজশাহী বিভাগের পুটিয়া উপজেলায়। অথচ সাত কর্ম দিবসের মধ্যে যোগদানের কথা থাকলেও সাড়ে তিন মাসেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি উল্টো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে বদলি স্থগিত করে এখনও স্ব-পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। গোপন সূত্রে জানাযায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত কমিটি কর্তৃক ১২ফেব্রয়ারীর সভায় সুপারিশ ক্রমে আশরাফ মজিদের বদলি নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে প্রশাসন পরিচালক ডাঃ মোঃ বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রশাসনিক বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়। আদেশের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় ৮ম কর্ম দিবসে হতে সরাসরি অব্যাহতি হবেন বলে জানানো হয়। বদলির চিঠি পাওয়ার পর আশরাফ মজিদ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতা মোটা অংকের টাকার বিনিয়মে বদলি স্থগিত করেন বলে জানাযায়। অনুসন্ধানে এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারির জানান, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সরকারের অর্থ অত্মসাত করে রাতারাতি কোটি টাকার উর্ধ্বে সম্পদের মালিক বনে গেছেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ।
দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করার সুবাদে আশরাফ মজিদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। আর এই সিন্ডিকেট চক্রে খোদ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতালে ওষুধ চুরি করে প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি ছাড়াও টেন্ডার জালিয়াতিসহ আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনায়সে। সাম্প্রতিক সময়ে তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলামের যোগসাজসে হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ হাসপাতালে পথ্য,ধূপি,স্টেশনারী এবং নন-স্টেশনারী মালামাল সরবরাহের টেন্ডার গোপন করার চেষ্ঠা করলে স্থানীয় ঠিকাদারদের চাপের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯জন ক্লিনার এবং সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের টেন্ডার গোপনে সম্পন্ন করা হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগে প্রায় ৪০লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেবার অভিযোগও পাওয়া যায়। আশরাফ মজিদ হাসপাতালের কম্বল, মশারী, চাদর ও বালিশের কভার ধৌতসহ বিভিন্ন টেন্ডার গোপন করে তার পছন্দের ব্যক্তিকে ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারী করে আসছেন। হিসাব রক্ষক পদে থেকে নানা দুর্নীতি করে শহরে জমি ক্রয় করাসহ ৫তলা বিশিষ্ট কোটি টাকার অট্রালিকা তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় ২৩লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে তার ছেলের চাকুরি নিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আশরাফ মজিদ নিয়মিত মাদক গ্রহণ করেন বলে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী এবং কর্মকর্তা অভিযোগ
করেন। হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হওয়ার রংপুর এবং ঢাকা থেকে একাধিক দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত শুরু হয় যা এখনো চলমান রয়েছে। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি একেএম সামিউল হক নান্টু বলেন, হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের সম্পর্কে অনেক অভিযোগ উঠেছে। সে এই পদে থেকে কোটি টাকার উপর সম্পদ গড়েছেন। তার দুর্নীতি নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। তার প্রশাসনিক বদলি মোটার অংকের টাকা দিয়ে স্থগিত রেখেছে। আশরাফ মজিদের বিষয়ে কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তার দুর্নীতির চাহিদা এখন লাগানহীন হয়ে উঠেছে। মাঠ পর্যায় সরকারের উন্নয়ন প্রশ্ন বিদ্ধ হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এই বিষয়ে আশরাফ মজিদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম বলেন, আশরাফ মজিদের বদলির অর্ডার সম্পর্কে বলেন, আমি অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি সেটি এক ধরনের ফেক বলে মনে হয়েছে। সেই অর্ডার নিয়েও রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। আসলে আশরাফ মজিদ ব্লাকমেইলের স্বীকার হচ্ছেন। আমি যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের টেন্ডার স্বচ্ছলতার সাথে করেছি। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। হতেও দেবনা বলে তিনি জানান। এখন কুড়িগ্রাম বাসী জানতে চায় এই দুর্নীতিবাজ হিসাবরক্ষকের খুটির জোর কোথায়।
Leave your comments