১ লাখ ৯২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে মাসে ভাতা পাঠানো হতো।সফটওয়্যারে সবার নাম অন্তর্ভুক্ত করার পর সংখ্যাটি ১ লাখ ৭১ হাজার হয়ে।দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে এত দিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মাসিক ভাতা পাঠানো হতো।কিন্তু গত অক্টোবর ও চলতি নভেম্বর মাসের ভাতা পাঠাতে গিয়ে দেখা গেছে,সংখ্যাটি হঠাৎ ২১ হাজার কমে গেছে।ভাতা পাওয়া সব বীর মুক্তিযোদ্ধার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্প্রতি সরকার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করেছে।তাতে সংখ্যার বিশাল এই হেরফের হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন তাহলে কীভাবে ২১ হাজার জনকে ভাতা দেওয়া হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ভুল বা এমআইএসে নাম তোলার ক্ষেত্রে করণিক ভুলের কারণে বড়জোর এক হাজার জন বাদ পড়তে পারেন।কিন্তু বাকি ২০ হাজার জন মাসের পর মাস হয় অনিয়ম করে,নয়তো একাধিক নামে একাধিক জায়গা থেকে ভাতা তুলেছেন।কোনটি ঠিক,তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এবং সরকার অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই করেই ভাতাপ্রাপ্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এমআইএসে তোলা হয়েছে গত অক্টোবরে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বছরের পর বছর ধরে জেলা প্রশাসনের তালিকার ভিত্তিতেই ১ লাখ ৯২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা পাঠানো হতো।কিন্তু এমআইএসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার পর সংখ্যাটি ১ লাখ ৭১ হাজার হয়ে গেছে।২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন।এর আগে ছিল ১০ হাজার টাকা।এর মধ্যে দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান বীর মুক্তিযোদ্ধা।বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।যদি অনিয়ম করে ২০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা এক বছর ভাতা নিয়ে থাকেন,তাহলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা।পাঁচ বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে কমবেশি প্রায় ১.৫ হাজার কোটি টাকা।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন কর্মকর্তা জানান,অনেকে শুধু বেসামরিক গেজেট দিয়ে জেলা পর্যায়ে তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।আবার কেউ কেউ একাধিকবার বিভিন্ন তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।যে কারণে এমআইএসে তাঁদের নাম দ্বিতীয়বার অন্তর্ভুক্ত হয়নি।কেউ কেউ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সবুজ মুক্তিবার্তা দেখিয়ে ভাতা তুলেছেন।কারও কারও সনদ জাল বা তথ্য ত্রুটিপূর্ণ,যা এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এমআইএসে যাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, শুধু তাঁদের গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ভাতা জেলা প্রশাসকের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে।আগামী ডিসেম্বর থেকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে ভাতা জমা হবে। সঙ্গে ভাতা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে মুঠোফোনে খুদে বার্তাও যাবে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, এমআইএসে অন্তর্ভুক্তির পর একসঙ্গে দুই মাসের ভাতা পাঠানো হয়েছে।এর মধ্যে এক মাসের ভাতার পরিমাণ ২০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ভাতা বাবদ পাঠানো হয়েছিল ২৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২১ হাজার কমে যাওয়ায় মাসে ২৫ কোটি টাকা কম লেগেছে।এর ফলে তাদের বছরে ৩৪২ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।জাতীয় পরিচয়পত্রকে বিবেচনায় রেখে অনলাইনে তথ্যভান্ডার করতে গিয়ে ২১ হাজার জন বাদ পড়েছেন।তবে ২১ হাজারের নাম বাদ হলেও এই সংখ্যা আরও কমতে বা বাড়তে পারে।আ ক ম মোজাম্মেল হক,মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন,জাতীয় পরিচয়পত্রকে বিবেচনায় রেখে অনলাইনে তথ্যভান্ডার করতে গিয়ে ২১ হাজার জন বাদ পড়েছেন।তবে ২১ হাজারের নাম বাদ হলেও এই সংখ্যা আরও কমতে বা বাড়তে পারে।এ ছাড়া ভাতা পাওয়া ৪১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তথ্য আবার যাচাই–বাছাই হবে।এর কারণ অনেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রমাণের জন্য যে সনদ জমা দিয়েছেন,তাতে সমস্যা আছে।যাঁরা জালিয়াতি করে ভাতা নিয়েছেন এত দিন,তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন,আমরা সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেব। যাঁদের নাম এমআইএসে যুক্ত হয়নি তাঁদের নাম,ঠিকানা পাঠাতে বলব।তাঁরা এত দিন কত টাকা নিয়েছেন,সেই হিসাবও চাইব।যাঁরা এত দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা নিয়েছেন,তাঁদের কাছে তা ফেরত চাওয়া হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ইউএনওদের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার টাকা পাঠাত।ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা জমা দিতেন।কিন্তু এখন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাতার টাকা যাবে।দেশে বর্তমানে মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার।তবে আইনি জটিলতার কারণে ভাতা পেতেন ১ লাখ ৯২ হাজার।এর মধ্য যে ১ লাখ ৭১ হাজারের নাম এমআইএসে যুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বিবেচনা নেওয়া হয়েছে লাল মুক্তিবার্তা,ভারতীয় তালিকা ও ‘গেজেট’।নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণের জন্য ৩৩ ধরনের কাগজপত্র রয়েছে।অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামই একেক নথিতে একেক রকম।তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামই বিবেচনা নেওয়া হয়।যাঁদের নাম এমআইএসে যুক্ত হয়েছে,তাঁদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাম সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।গত এক সপ্তাহে ফেনী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, ফরিদপুর,দিনাজপুর ও কুমিল্লা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা,জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের(ইউএনও)সঙ্গে কথা বলেছে।তাঁরা বলেছেন,অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ভাতার টাকা এখনো (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) পাননি।

(সুত্র প্রথম আলো)

Leave your comments