এ মাস শেষে শুরু হবে নতুন বছর ২০২০ সাল। নতুন বছরকে সামনে রেখে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছে মত বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেওয়া শুরু করেছে। এমন অবস্থায় সাধারণ ভাড়াটিয়ারা মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সূত্র জানায়, রাজধানীতে মধ্যবিত্তের সংকটের আরেক নাম বাড়ি ভাড়া। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩৮৮ শতাংশ। একই সময় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। স্বল্প আয়ের যে কোনো মানুষের মাসিক আয়ের অর্ধেকের বেশি চলে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া বাবদ।

মালিকের ইচ্ছামতো ভাড়া

রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বাড়ে মালিকের একক ইচ্ছায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ কিংবা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার অজুহাতে প্রতি বছর
ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ান মালিকরা। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নেই। তাই হিমশিম অবস্থা এ শহরের
ভাড়াটিয়াদের। একটি হিসাব বলছে, ঢাকা শহরের ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুই বেড, ড্রয়িং, ডাইনিং,
একটি রান্নাঘর, একটি বাথরুম সবমিলিয়ে ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। লালবাগের আতশখানা লেনের এ ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া
১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে যোগ হয় বিদ্যুৎ গ্যাস কিংবা পানির বিল। আগামী মাসে নতুন করে নতুন করে এ ফ্ল্যাটের
ভাড়া বাড়বে ১ হাজার টাকা। তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ভাড়াটিয়া রফিকুর রহমান বলেন, যে বেতন পাই সেটা বেশিরভাগ
ভাড়াতেই চলে যায়। এরপর বাচ্চাদের স্কুল, সংসার চালানো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বাড়তি দাম সবমিলিয়ে খুবই খারাপ
অবস্থা।

ভাড়ার এমন বোঝা প্রতিনিয়তই টানতে হয় এ নগরবাসীকে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া
বাড়িয়ে দেন বাড়ির মালিকরা। এ কারণে অনেককে ঢাকা ছাড়তেও দেখা যায়। অনেকে আবার বাসা ছেড়ে দিয়ে কম
ভাড়ার বাসায় ওঠেন। এমনই একজন ফাহমিদা হক গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে বাস করছেন মোহাম্মদপুরে। বছর
বছর বাড়িভাড়া বাড়ার কারণে ১৪ বছরে তিনি বাসা পরিবর্তন করেছেন ছয়বার। গেল ৩ বছর ধরে থাকছেন ৭০০ বর্গফুটের
একটি বাসায়। প্রতি বছরই বাড়ছে ভাড়া।

বছরে দুইবার ভাড়া বৃদ্ধি

তিনি বলছেন, ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা বাসা ভাড়া। দুইটি বাচ্চা স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের খরচ আছে ৭ থেকে ৮
হাজার টাকা। বাকি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। তাই চিন্তা করছি, এ বাসাটাও
ছাড়ব। এ চিত্র রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই। অনেক ভাড়াটিয়া অভিযোগ করেন, তাদের অনেকের ভাড়া বছরে
দুইবারও বাড়ানো হয়। এ প্রসঙ্গে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, সরকারকে এখানে এগিয়ে আসতে হবে।
সরকার বিত্তবানদের জন্য প্লট-ফ্ল্যাটসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা করছে। নানা ধরনের বড় বড় প্রজেক্ট হচ্ছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের
মানুষের কথা ভাবা হচ্ছে না।

বাড়ির মালিকদের যুক্তি, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, তার ওপর বাড়িভাড়ার টাকার ওপর অনেক মালিকই নির্ভরশীল। এছাড়া নানা ধরনের ট্যাক্স, বাড়ির মেনটেইনেন্স খরচ বৃদ্ধি এসব কারণে ভাড়া বাড়াতে হয়। তারা বলেন, অনেক বাড়িওয়ালার কোনো ব্যবসা বা ইনকাম থাকে না। বাড়ি ভাড়ার ওপরই নির্ভর করতে হয়। তাদের সাংসারিক খরচ মেটাতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। তাই বাড়িভাড়া না বাড়িয়ে উপায় থাকে না। ভাড়াটিয়া ঐক্যপরিষদ বলেছে, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন আছে। রাজধানীর কোন এলাকায় বাড়িভাড়া কত হবে, সেটিও নির্ধারিত। কিন্তু এসব শুধু কাগজ-কলমেই। বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নেই। সে কারণেই মালিকদের এমন স্বেচ্ছাচারিতা। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন চান ভাড়াটিয়া ও ভোক্তা অধিকার কর্মীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি নিয়ে যত শিগগিরই সম্ভব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব। সমন্বয় করে একটি প্লাটফর্ম রেডি করতে হবে; যেখান থেকে আমরা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

Leave your comments