কুড়িগ্রাম জেলার নাজিরা মিয়াপাড়ায় অল্প কয়েক বছর ধরে বসবাস শুরু করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী অধিবাসী আজম খানের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা ২৮.০৭.২০২০  ইংরেজি তারিখে কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিম্নরূপঃ

“কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মেহেরুন নেছা নামের এক নারী। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা সদরের নাজিরা মিয়াপাড়া এলাকার আজম খানের স্ত্রী।

বুধবার বেলা ১২টায় জেলা প্রেসক্লাব হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত অভিযোগে বলেন ,কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কিশামত মধুপুর গ্রামের আকবর আলির ছেলে আজিজুর রহমান প্রতারণা করে ৩৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মেহেরুন নেছা আরো বলেন, রংপুর সিও বাজার সংলগ্ন বাড়িসহ সাড়ে ৮ শতক জমি ৯৬ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে আজিজুর রহমান ৫৭ লক্ষ টাকা দিয়ে জমিটি তার কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়। বাকি টাকা পরবর্তীতে দেওয়ার জন্য মধ্যস্থতা করে থাকলেও দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তিনি সেটা বুঝে পাননি। এখন বাকি পাওনা টাকা তাদের কাছে দাবি করলে তারা তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে।

সম্প্রতি সময়ে অভিযুক্তরা মারপিট করে খুন-জখম করারও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেহেরুন নেছা। তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা সহ প্রায় ৩৯ লক্ষ টাকা প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।”

উক্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যে প্রতিবাদ আমাদের পত্রিকায় প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন সেটি নিম্নরূপঃ

“অনলাইন পত্রিকায় কুড়িগ্রাম জেলার নাজিরা মিয়াপাড়া এলাকার জনাব আজম খানের স্ত্রী জনাবা মেহেরুন্নেসা কর্তৃক মে মিথ্যা তথ্য দ্বারা প্রেস কনফারেন্সে করেছেন সেই মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি ১৬.০৫.২০১৭   ইংরেজি তারিখে তার বেদখলকৃত জমির সমুদয় মূল্য পেয়ে যে জমি কবলা দলিল করে দেন দলিলে বর্ণিত ৪ জনকে তার পরিমাণ হলো ৮.৭৫ শতাংশ।  তিনি যে মিথ্যা তথ্যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন তাহা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রকৃত সত্য হলো তাকে ও তার স্বামীকে মারপিট করে ওই বাড়ি থেকে বাহির করে দেন রংপুর সিও বাজার এর স্থানীয় লোকজন ২০১৬ সালে । তিনি উক্ত জায়গা থেকে বেদখল হয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার অধিবাসি জনাব ফিরজ কবির কাজল এবং তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মুকুল হোসেন এর মাধ্যমে আমার নিকট বিক্রির নিমিত্তে পক্ষ বা একাধিক ব্যক্তি খুজে দেখার প্রস্তাব নিয়ে আসেন। তিনি কান্না কাটি করেন। অনেক পরে  দলিলে উল্লেখিত ব্যাক্তিগন যার মধ্যে পুলিশের একজন অতিরিক্ত এসপি, এনএসআই এর একজন ডেপুটি ডিরেক্টর এবং একজন সাব রেজিস্ত্রার ও আমি মিলে উক্ত জমির সমুদয় মূল্য (দলিলে উল্লেখিত)  পরিশোধ করলে তিনি উক্ত জমি কবলা দলিল করে দেন। তিনি জমির মূল্য পেয়ে আমাদেরই সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখায় ডিপিএস করেন। উল্লেখ্য যে  রংপুর জেলার সিও বাজারে তার বেদখলকৃত ও বিক্রিত জমি নিয়ে উক্ত বাড়ি সংলগ্ন জনাব আব্দুল মান্নান এর সহিত দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও মামলা বিদ্যমান ছিল। তিনি যে মিথ্যা তথ্য দ্বারা প্রেস কনফারেন্স করেছেন তাহা উক্ত ফিরোজ কবির কাজল এবং মুকুল চেয়ারম্যান সহ দলিলে উল্লেখিত পক্ষগণ এবং সাক্ষীগণ কে জিজ্ঞাসা এবং বাংলাদেশ  ব্যাঙ্ক, রংপুর শাখার তথ্য পর্যালোচনা করলে ঘটনা  দিবালোকের মত পরিস্কার হয়ে যাবে। আরও উল্লেখ থাকে যে, তিনি রংপুর সিটি  করপোরেশন এর অনুমতি ব্যতিত  অবৈধভাবে যে অবকাঠামো উক্ত জমিতে নির্মাণ করেন আইন অনুযায়ী তাহা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।

অতএব, উক্ত সংবাদের মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে অত্র প্রতিবাদ আইন অনুযায়ী প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করিবেন।”

আমরা https://www.bd24.news এর পক্ষ হতে উভয়পক্ষের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে যে বিষয়টি পাই তার আলোকেই আমরা উপরোক্ত শিরোনাম করি। আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্যের সূত্র ধরে রংপুর জেলার সিও বাজারে অবস্থিত মেহেরুন্নেসার সেই বাড়ি এবং বাড়ি সংলগ্ন আব্দুল মান্নান এর বাড়ির আশপাশে  অনুসন্ধান করে জানতে পারি যে মেহেরুন্নেসার স্বামী আজম খান হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী অধিবাসী।  রংপুরের সিও বাজারের আব্দুল মান্নানের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। তার ব্যবসা দেখাশোনা করতে করতে একসময় তার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে থাকেন। ইহার প্রতিদান হিসেবে আব্দুল মান্নান মেহেরুন্নেসা নামে  মোট ৮.৭৫  শতাংশ কবলা দলিল করে দেন।  মেহেরুন্নেসার স্বামী আজম খান উক্ত জমির এক অংশে যে পাকা অবকাঠামো তৈরি করেন (৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা  বিল্ডিং) সেই অবকাঠামো হতে সিও বাজারের স্থানীয় লোকজন মেহেরুন্নেসা ও তাঁর স্বামীকে ব্যাপকভাবে মারধর করে উক্ত বাড়ি হতে বাহির করে দেন। উক্ত বাড়ি সংলগ্ন একজন আইনজীবী তাদেরকে কোন রকমে রংপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। আজম খান ও মেহেরুন্নেসা গংদের বিরুদ্ধে উক্ত লোকজন একটি ফৌজদারি মামলা করেন। তারা ওই এলাকা থেকে বহিষ্কৃত হন। ওই এলাকায় আর প্রবেশ করতে না পেরে অনুমান ২০১৬ সালের দিকে কুড়িগ্রামের  নাজিরা মিয়াপাড়ায় নতুন করে বসতি স্থাপন করেন।

মেহেরুন্নেসা ও তাঁর স্বামী কুড়িগ্রামে এসে নতুন করে বসতি স্থাপন করে রংপুরের ওই বেদখলকৃত বাড়ি বিক্রির জন্য বিভিন্ন লোকের কাছে ধর্না দেয়।  অবশেষে মেহেরুন্নেসা ৪ জন ব্যক্তিকে  অর্থাৎ পুলিশের একজন অতিরিক্ত এসপি, এনএসআই এর একজন ডেপুটি ডিরেক্টর এবং একজন সাব রেজিস্ত্রার ও বিচার বিভাগের একজন বিচারক মিলে উক্ত জমির সমুদয় মূল্য (দলিলে উল্লেখিত)  পরিশোধ করলে তিনি উক্ত জমি রংপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কবলা দলিল করে দেন ২০১৭  সালের প্রথম ভাগে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতীয়মান ঘটনা অর্থাৎ দলিল সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে এবং সেই মূল্য বাবদ যে টাকা মেহেরুন্নেসা গ্রহণ করেছেন তাহা বাংলাদেশ ব্যাংকের রংপুর শাখায় ডিপোজিট করেছেন এবং কেন এতদিন পরে হঠাৎ করে উপরোক্ত অভিযোগ করলেন তাহা  মেহেরুন্নেসার নিকট থেকে সরাসরি জানার ও যাচাইয়ের জন্য তাহার ব্যবহৃত মুঠোফোনে অদ্য ৩১.০৭.২০২০ ইংরেজি তারিখ  বিকাল ৪.২৯ ঘটিকায়  কয়েকবার ফোন করিলে তিনি রিসিভ করেন না। তারপর  অদ্যই  বিকাল ৫.২৪ ঘটিকায় তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে নিম্নোক্ত চারটি প্রশ্ন সংক্ষিপ্ত মেসেজের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

(১)আপনি গত ২৮.০৭.২০২০ ইংরেজি তারিখে কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবের হল রুমে জনাব আকবর আলির ছেলে জনাব আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন সেই আকবর আলীর কোন ছেলে আজিজুর রহমান নামে নেই ওই এলাকায় অর্থাৎ উলিপুর উপজেলার কিশামত মধুপুর গ্রামে। এই মিথ্যা তথ্যের ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কি? (২) আপনার অন্যান্য বক্তব্যের কোন ডকুমেন্ট আছে কিনা ? (৩) আপনাকে ও আপনার স্বামীকে আপনাদের সিও বাজারের বাসা থেকে আব্দুল মান্নানের লোকজন মারপিট করে মাথা ফাটিয়ে বাড়ি থেকে বাহির করে দিয়ে উক্ত বাড়ি বেদখল করেছিল এবং আপনাদের বিরুদ্ধে থানাতে  ফৌজদারি মামলা করেছিল এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি ? এবং (৪) রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর অনুমতি ব্যতীত অবৈধভাবে আপনাদের সিও বাজার এর জায়গায় যে অবকাঠামো নির্মাণ করেছিলেন সেই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

কিন্তু তার মুঠোফোনে উপরোক্ত চারটি প্রশ্ন মেসেজ আকারে পাঠানো হলেও কোন উত্তর কিংবা কোনো ফিরতি ফোন  দিয়ে তিনি রেসপন্স করেন নি।

গত ১৬.০৫.২০১৭ ইংরেজি তারিখে সম্পাদিত দলিলে বর্ণিত সাক্ষীগণ এবং রংপুর সিও বাজার সংলগ্ন উক্ত বাড়ির আশেপাশে অনুসন্ধান করে মেহেরুন্নেসার  বক্তব্যের স্বপক্ষে  কোন ব্যক্তির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উপরন্ত তিনি তার প্রেস কনফারেন্সে উক্ত সম্পত্তির যে পরিমাণ উল্লেখ করেছেন তা সঠিক নয়’।  কেননা দলিলে উল্লেখ আছে ৮.৭৫ শতাংশ।প্রেস কনফারেন্সে  প্রথমে যদিও তিনি একজন ব্যক্তির  বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন  কিন্তু প্রেস কনফারেন্সের শেষাংশে এসে তিনি নিজেই একাধিক ব্যক্তির কথা বলেছেন এবং সেই একাধিক ব্যক্তি কারা কবে কখন তাকে হুমকি দিয়েছে সে সম্পর্কে আমরা উভয় জায়গাতে গিয়ে কোনো তথ্য পাই নি। বরং কুড়িগ্রাম জেলার নাজিরা মিয়াপাড়াস্থ মেহেরুন্নেসার বাসার আশেপাশে অনুসন্ধানে জানা যায় আজম খান ও তার স্ত্রী অল্প কয়েক বছর ধরে কুড়িগ্রামে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছেন  রংপুর হতে এসে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট আজিজুর রহমান  এর নিকট আমরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে মেহেরুন্নেসা যে মিথ্যা তথ্যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন তাহা পেনালকোডের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ এবং আইন অনুযায়ী তিনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং যথাসময়ে এ বিষয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

Leave your comments