নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করার জন্য চালানো বর্বরোচিত নির্যাতন এবং তা মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কা-ে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের যুবক দেলোয়ার হোসেন এখন সংবাদের শিরোনামে। ভুক্তভোগী ওই নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এর আগে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ‘দেলোয়ার বাহিনীর’ এই প্রধানের বিরুদ্ধে। কে এই দেলোয়ার?
জানা গেছে, কিশোর বয়সে কাঁচামালের ব্যবসা করত দেলোয়ার। কয়েক বছর পর সিএনজি অটোরিকশা চালাতে শুরু করে সে। হাছানহাট, একলাশপুর, চৌমুহনী চৌরাস্তাসহ কয়েকটি রুটে সিএনজি চালানোর সময় তার সখ্যতা গড়ে ওঠে স্থানীয় মাদককারবারিদের সঙ্গে। এর পর সিএনজি চালানো রেখে একদল যুবকের সঙ্গে আড্ডা এবং সেই আড্ডার সঙ্গীদের নিয়ে সে গড়ে তোলে মাদক কারবারের চক্র। শুরু হয় বেপরোয়া জীবন। দ্রুতই দেলোয়ার জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-েও। সম্প্রতি বেগমগঞ্জের গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে দেশে শুরু হয় তোলপাড়। আর এর সঙ্গে বেরিয়ে আসছে এ কা-ের মূল হোতা বলে অভিযুক্ত দেলোয়ারের একের পর এক কুকীর্তিও।একলাশপুরের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পরই শুরু হয় দেলোয়ারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। এক সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী হাজীপুরের সুমন প্রকাশ খালাশির হয়ে অপকর্ম করতে শুরু করে সে। সুমন বাহিনী অভিযুক্ত, এমন একাধিক হত্যাকান্ডের সঙ্গে দেলোয়ার সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে। বেগমগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যার ঘটনায় একটি, বিস্ফোরক আইনে একটি ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়। স্থানীয়দের ভাষ্য, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একলাশপুরের দালালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের এক কর্মী সমাবেশে ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আলমগীর আলোর হাত ধরে স্থানীয় সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরণের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে দেলোয়ার।এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরণ আমাদের সময়কে বলেন, এ তথ্য সঠিক নয়। ধর্ষকসহ অনেক অপকর্মকারী দলীয় নেতাদের ছবিসহ বড় বড় পোস্টার ঝুলিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করে। দেলোয়ার আমার হাতে ফুল দিয়ে আমাদের দলে যোগদান করেনি। তবে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর অন্যদের মতো সেও আমার হাতে ফুল দিয়ে ছবি তুলেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কেউ গৃহবধৃকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা তদন্ত করে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা এ ধরনের অপকর্ম করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং যারা অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাদের বিরুদ্ধেও দল ব্যবস্থা নেবে।অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগে যোগদানের পর স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় দেলোয়ার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কিশোর ও যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলে ‘মামা বাহিনী’। শুরু হয় এলাকায় তাদের ত্রাসের রাজত্ব। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দেলোয়ার বাহিনীর হামলার স্বীকার হয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। তার সশস্ত্র হামলায় হাত-পা পর্যন্ত খোয়াতে হয়েছে অনেকের। এ ছাড়া চুক্তিতেও হামলা চালাত তার বাহিনী। তার বিরুদ্ধে নারীদের উত্ত্যক্ত ও ধর্ষণ করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যদিও এতদিন প্রাণভয়ে প্রশাসনে অভিযোগ করতে সাহস পায়নি কেউ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, একাধিক দলীয় নেতার মদদ পেয়ে দেলোয়ার বছরখানেক ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় হেন অপরাধ নেই, যা তার বাহিনী করেনি। নারীদের প্রতি তাদের অনৈতিক প্রস্তাব ও মাদক কারবারে সম্মত না হলেই বিপদ। ভুক্তভোগী ওই নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ এবং তাকে পরিবারসহ এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছে দেলোয়ার। একলাশপুর ও গাবুয়ার মাদক কারবারের অধিকাংশেরই নিয়ন্ত্রণ ছিল দেলোয়ারের হাতে।
Leave your comments