মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পুর্ব কালুডাঙ্গা গ্রামের আশরাফুল আলম রাজু।
নিজের কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য্য ও সততার সঙ্গে মৌ চাষ করে এখন মাসে আয় করছেন প্রায় এক লাখ টাকা।

আশরাফুল আলম রাজু উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়েনর পুর্ব কালুডাঙ্গা গ্রামের ইসাহক আলীর ছেলে। লেখাপড়র
পাশাপাশি তিনি মৌ চাষ করছেন। পুর্বে মৌ চাষের অভিজ্ঞতা তার ছিল না। শখের বসে তিনি তার মামা আইনুল
হকের সহযোগিতায় মৌ চাষের কলা কৌশল শিখে এখন তিনি বানিজ্যিকভাবে মৌচাষ করছেন। ২০১৬ সাল থেকে
হাতে-কলমে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এরপর তার মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করতে কোনো অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
তিনি এখন উপজেলার একমাত্র সফল মৌচাষি।

২০১২ সালে আশরাফুল আলম রাজু একটি মৌ বাক্স দিয়ে মৌচাষ শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে মৌকলোনী বাড়াতে
থাকেন এবং মধু উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে তাঁর ৭০টি মৌ বাক্স রয়েছে। এখন সে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষ করে মধু সংগ্রহ করছেন।

মাসে প্রায় ৪০০-৫৫০ কেজির মতো মধু বিক্রি করেন। প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। সুস্বাদু ও দামে
সস্তা আশরাফুল আলম রাজুর মধুর ব্যাপক চাহিদা এলাকায়। নির্ভেজাল মধুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই তিনি বিএসটিআই
ও বিসিকি থেকে অনুমোদন নিয়ে বানিজ্যিকভাবে ” রাজ মধু ” নামে বাজারজাত করছেন। তাঁর মধু এখন জেলার সব
উপজেলায় পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন

আশরাফুল আলম রাজু মৌচাষের আয় দিয়ে পরিবারের খরচ, নিজের এবং ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন।
আশরাফুল আলম রাজু বিবিএস শেষ করে মাস্টার্সে পড়াশুনা করছেন। আশরাফুল আলম রাজুর সামাজিক অর্থনৈতিক
অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

আশরাফুল আলম রাজু ২০১৬ সালে বিসিক থেকে ১৫ দিনের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ প্রকল্পের উন্নত
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। উক্ত প্র্রশিক্ষণে হাতে কলমে উন্নত রাণী উৎপাদন, মাইট পরীক্ষা, হাইজেনিক পরীক্ষা,
মৌকলোনী ব্যবস্থাপনা, পোলেন উৎপাদন ইত্যাদি শেখানো হয়।এরপর ১২দিন ব্যাপী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং মধু
পরিশ্রুতকরণ এর ধাপ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও বিশুদ্ধ মধু উৎপাদন,বাজার জাতকরণ এবং মৌফসল
উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জেলা উপজেলা পর্যায়ে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এসব কর্মকান্ডের ফলে আশরাফুল আলম
রাজু অনেক কিছু শিখেছেন এবং তার মৌচাষ শিল্পে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন। আশরাফুল আলম রাজু
মৌকলোনীতে এখন রোগ বালাই খুব কম হয়। উন্নত পদ্ধতিতে রাণী উৎপাদন করছেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে
মৌকলোনীতে করণীয় ঠিক করছেন।

আশরাফুল আলম রাজু বলেন, একটি মৌ বাক্স থেকে মাসে চারবার মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি বাক্সে প্রতিবার প্রায়
দুইকেজি করে মধু পাওয়া যায়। সরিষা মৌসুমে মধু বেশী হয় বাকী সময়ে মৌচাকে কম মধু পাওয়া যায়। একটি মৌ
বাক্সে একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে, আর পুরুষ মৌমাছি থাকে কিছু সংখ্যক বাকিরা সবাই শ্রমিক। তারা ফুল থেকে
মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকে। রানি মৌমাছি না থাকলে মৌচাকে মধু হবে না বলে জানালেন মৌ চাষি আশরাফুল।

আগ্রহী যুবক

শীত বেশি হলে বাক্সগুলো নিরাপদে রাখতে হয়। তার মধু উৎপাদন দেখে এলাকার অনেক আগ্রহী যুবক ও সৌখিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে মধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে তিনি তার মধু চাষের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।

আশরাফুল আলম আগামীতে ২০০টি মৌ বাক্স করার ইচ্ছাপোষন করেন। একটি মৌ বাক্স্র প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে তাই তিনি সরকারের নিকট মৌচাষীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধার দেয়ার আবেদন জানান ।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, মধু মহান সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ। যা সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। মধুর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। শিশুদের ঠান্ডা ও কাশি সারাতে খুবই ভাল কাজ করে। বড়দের ক্ষেত্রেও মধুর রয়েছে বিশেষ কিছু গুণাবলি। মধু দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উলিপুরে এটাই বাণিজ্যিকভাবে প্রথম মৌ চাষ উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মৌমাছি চাষে মধুর জোগানের পাশাপাশি ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন ২০ ভাগ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। যে মাঠে যত বেশি মৌমাছি থাকবে, সেই মাঠে তত বেশি পরাগায়ন হবে। স্বাভাবিকভাবে একবিঘা জমিতে ৪-৫ মণ সরিষা হয়। মৌমাছি বেশি হলে প্রায় ২০ ভাগ উৎপাদন বেড়ে যায়। এই মৌসুমে উপজেলায় ১জাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে না করে কমিউনিটি আকারে সরিষার আবাদ করাটাই উত্তম। এতে উৎপাদন ভালো হবে এবং মৌ চাষও এগিয়ে নেওয়াটা সহজ হবে।’
সরকারি এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শুধু সরিষার মৌসুমেই নয়, সারা বছরই মৌ চাষ করা যাবে। কারণ আমাদের দেশে সারা বছরই কোনও না কোন ফুল থাকে। ফলে সরিষা শেষে আম বাগান, লিচু বাগানেও মৌ চাষ করা যাবে। মৌ চাষে বিনিয়োগের তুলনায় মুনাফা বেশি। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করতে চান, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

 

উলিপুর,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

Leave your comments