আগামী কাল ১৩ নভেম্বর কুড়িগ্রাম উলিপুরের হাতিয়া গণ-হত্যা দিবস।স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্নতম নারকীয় এ হত্যাকান্ডের ইতিহাস হাতিয়া গণ-হত্যা দিবসটি জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও কুড়িগ্রামের মানুয়ের কাছে স্মরনীয় হয়ে আছে।আজও নিহত শহীদের স্বজনরা খুঁজে ফিরে তাদের আপনজনদের।১৯৭১ সালের সেই নারকীয় রক্তঝরা দিনটি ছিল ১৩ নভেম্বর,২৩ রমজান, শনিবার।গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ সেহরী খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে,কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিশ্চিল।এরই মধ্যে ফজরের নামাজের সুমুদুর আজানের ধ্বনিত হচ্ছে মসজিদে।নামাজের প্রস্তুতি নিতে কেউ অজু সেরেও ফেলেছেন।নামাজের জন্য অনেকে মসজিদে যাওয়ার জন্য বাড়ী থেকে পা বেড়িয়েছিলেন।এরই মধ্যে হঠাৎ পাকিস্তানী হায়েনার বাহিনীর মর্টার সেল আর বন্দুকের অবিরাম গুলি বর্ষনে প্রকম্পিত হয়ে হাতিয়ার দাগারকুটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলো।সহজ সরল নিরীহ মানুষগুলো কিছু বুঝে উঠার আগেই পাকিস্তানী হায়েনা বাহিনীর ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার,আলবদর,আল-সামস বাহিনী মিলে গ্রামের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।আর সাথে চলতে থাকে লুট-পাট ও নির্যাতন।এরকম পরিস্থিতিতে এলাকার নিরীহ মানুষজন জীবন বাচানোর জন্য এদিক ওদিক এলো-পাতারী ছোটাছুটি শুরু করে।পাকিস্তান হায়েনা বাহিনীর ছোড়া বৃষ্টির মতো গুলিবষর্নে মানুষজন জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেত ঝোপ-ঝাড়ে শুয়ে জীবন রক্ষার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আর্তনাদ করতে থাকে।অনেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাচাঁনোর চেষ্ঠা করে।কিন্তু অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে আসে এলাকার আকাশ-বাতাস।এসব অসহায় মানুষের জীবন বাচাঁনোর চেষ্ঠা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়।পাক- হানাদার বাহিনী,তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার,আল-বদর,আল-সাম্স বাহিনীর সহযোগীতায় আত্মগোপন করা মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে এসে দাগারকুঠি গ্রামে সারিবদ্ধ করে নির্দয় ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন মায়ের কোলের শিশুটিও রক্ষা পায়নি।সারাদিন ব্যাপী চলে হানাদার বাহিনীর হত্যা আর অগ্নিসংযোগ।আগুনে পুড়ে যায় অনন্তপুর, দাগারকুটি,হাতিয়া বকশী, রামখানা, নয়া দারাসহ আশপাশের গ্রামের শতশত ঘর-বাড়ী।মহুর্তে গ্রামগুলো পরিনত হয় ধ্বংস স্তুপে।সেদিন পাক হানাদার বাহিনীর ও তাদের দোসর রাজাকার,আল-বদর, আল-সাম্স বাহিনীর সহযোগীতায় উপজেলা হতে ৮কিঃ মিঃ পুর্বে ব্রক্ষ্রপুত্র নদ বেষ্ঠিত হাতিয়া দাগারকুটি গ্রামের নিরীহ ৬ শত ৯৭ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।সে গুলো আজ শুধুই স্মৃতি।দাগারকুটি গ্রামটিকে ঘিরে স্মৃতিসৌধ নির্মান করে এলাকার মানুষজন প্রতি বছর শহীদদের স্মরন করে আসছে।কিন্তু করালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদ দাগারকুটি গ্রামটিকে বিলীন করে দিয়েছে। বর্তমানে অনন্তুপুর বাজারের পশ্চিম দিকে নতুন করে স্মৃতিসৌধ নির্মান করে দিবসটি পালন করে আসছেন শহীদ পরিবারগুলো,উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ কুড়িগ্রামবাসী।হাতিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন জানান,দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদদের স্বরনে একটি স্মৃতিতম্ভ নির্মান করা হয়েছে মাত্র।শহীদদের তালিকা ও শহীদ পরিবারের সহায়তা বা স্বীকৃতি দেয়া হয় নাই।এ সমস্ত শহীদ পরিবারের অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন যাপন করছে।গণ-হত্যার শিকার শহীদ পরিবারগুলো ও কুড়িগ্রামবাসীর দাবী “হাতিয়া গণ-হত্যা দিবস” জাতীয় পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন সহ ক্ষতিগ্রস্থ শহীদ পরিবার গুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুর্নবাসন করা হউক।

Leave your comments