শারীরিক অক্ষমতা যে একটা মানুষের বোঝা হবার কারণ না সেটার প্রমান দিলেন আবারো যশোরের সেই তামান্না নূরা ।

তামান্না যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর বড় মেয়ে। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে স্বপ্ন জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে সে জন্মগতভাবেই দুই হাত ও এক পা নেই তামান্না নূরার। স্বপ্ন জয়ের লক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল এবারের এস এস সি পরীক্ষায় আর সাপ্পলের সাথে কৃতকার্য হয়ে স্বপ্নচুড়ার আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো তামান্না।

অদম্য এই মেয়েটি প্রথম শ্রেণী থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত মেধা তালিকায় শীর্ষে ছিল। পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল। ২০১৩ সালে সে প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ও জিপিএ-৫ পায়।

“বিজ্ঞানের ছাত্রী তামান্না পড়াশোনায় অত্যন্ত ভাল। মুখ ও পা দিয়ে জ্যামিতি ও বিজ্ঞানের চিত্র আঁকার পাশাপাশি সে খুব ভাল ছবি আঁকতে পারে। তার আঁকা ছবি স্থানীয় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছে ।”

বাবা-মা দুইজনই সব সময় তামান্নার দিকে বিশেষ নজর রেখেছেন। আর তামান্নার নিজের ইচ্ছা ও চেষ্টা তো ছিলই। তামান্নাকে প্রথমে কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাতে চায়নি জানিয়ে তিনি সেদিনের কথা স্মরণ করেন।

মা খাদিজা পারভিন বলেন, “জন্ম থেকেই ওর দুটি হাত ও একটি পা নেই। কিন্তু তামান্না প্রায় সব কাজ নিজে করতে পারে।

“পা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। সাজগোজ, চুল আঁচড়ানো, বইয়ের পাতা ওল্টানো, ছবি আঁকা, রুলার দিয়ে খাতায় দাগ কাটা, লেখার কাজ—সবই করতে পারে। পা দিয়ে করাটা ওর অভ্যাস হয়ে গেছে।”

ছোটবেলা পড়ার প্রতি তামান্নার প্রবল আগ্রহ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম পড়ায় ভালো হলে কেন লিখতে পারবে না। তাই পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম আটকে দিয়ে লেখার তালিম দিই। কয়েক দিনের মধ্যেই সে সুন্দর লিখতে শিখে যায়।” আমরা তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর কথা চিন্তা করি কিন্তু কোন স্কুল তাকে ভর্তি নিতে চায়নি

“অবশেষে আমার স্বামীর অনুরোধে বাঁকড়ার বেসরকারি আজমাইন এডাস স্কুলের শিক্ষক রুবিনা আক্তার তার ভর্তির ব্যবস্থা করেন।”

রুবিনা আক্তার জানান “তামান্না অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে। তার স্মরণশক্তি প্রখর। স্কুলে ভর্তির পর সে লেখাপড়ায় ক্লাসের সবাইকে টপকে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠে।” এই স্কুল থেকে ২০১৩ সালে পিইসি এবং পরে জেএসসি পরীক্ষায়ও তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

এই ছিল সংক্ষেপে তামান্নার এগিয়ে যাবার পেছনের গল্প। এখন সে একটি পা দিয়ে আর মেধা কাজে লাগিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে চায়। “ বড় হয়ে সে ডাক্তার হতে চায়। প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয় তা প্রমাণ করার জন্য কাজ করতে চায়।

তামান্নার বাবা একজন মুদি দোকানি। “সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। তাই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে এসে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তামান্না একটি হুইল চেয়ারে করে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় যাওয়া-আসা করে।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তামান্না বড়। তার ছোট বোন মমতাহেনা রশ্মী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে । আর ভাই মহিবুল্লার বয়স চার বছর।

Leave your comments