সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাষ্ট্রপক্ষের ২২তম সাক্ষী বুয়েটছাত্র মো.গালিব এবং সাখাওয়াত ইকবাল অভিকে জেরা করা নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ ঘটে।রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভুঞা এবং আসামি নাজমুস নাজমুস সাদাত,হোসেন মোহাম্মদ তোহার আইনজীবী রেজাউল ইসলামের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হলে পরে আসামি পক্ষের অন্য আইনজীবীরাও তাতে জড়ান।এতে আদালতের কাজ বেশ কিছুক্ষণ থেমে থাকে।জেরায় আইনজীবী রেজাউল সাক্ষী গালিবকে প্রশ্ন করেন যে তার মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল কি না?তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ বলেন,এটা রিলিভেন্ট প্রশ্ন নয়।এতে আসামির আইনজীবী বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন,এ রকম প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন না করতে দিলে আমরা এ আদালতে মামলা চালাতে পারব না, অন্য আদালতে যাব।তার কথায় অন্য আসামির আইনজীবীরাও সায় দিলে আবু আব্দুল্লাহ ক্ষেপে উঠে বলেন,আপনার প্রশ্ন করা হয় না।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আইনজীবী রেজাউল বলেন, আপনার কাছে কি প্রশ্ন করা শিখতে হবে?আসামিপক্ষের অন্য আইনজীবীরাও রেজাউলকে সমর্থন করলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।এতে শুনানি বন্ধ হয়ে যায়।বিচারক আবু জাফর মো.কামরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষ শান্ত হলে শুনানি পুনরায় শুরু হয়।আবু আব্দুল্লাহ রাতে জানান,শুনানির সময়ের ঘটনার জন্য অ্যাডভোকেট রেজাউল পরে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।আবরার হত্যামামলার দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ নিয়ে ক্ষোভ আইনজীবীদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বুয়েটছাত্র গালিব রোববারই জবানবন্দি দিয়েছিলেন।সোমবার তাকে জেরা করা হয়।আসামি অনিক সরকারের আইনজীবী মাহবুব আহম্মেদ সাক্ষী গালিবকে বলেন, “আবরার হত্যার পর আপনাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই কারণেই আপনি আজ আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন?উত্তরে গালিব বলেন,এটা সত্য নয়।আবরারের সহপাঠি অভি জবানবন্দিতে বলেন,আবরারকে নিয়ে যাওয়ার পর হোসেন মোহাম্মদ তোহা,আমি ও সাইফুল ইসলামকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলে।আমি তখন ভয় পেয়ে যাই,কারণ এর সাত-আট মাস আগে সালাম না দেওয়ার অপরাধে শেরে বাংলা হলের ছাদে অমিত সাহা আমাকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে মারপিট করে আমার ডান হাত ভেঙে দিয়েছিল।এরপর তিনি তার হাত আদালতে দেখিয়ে বলেন,এখানে অপারেশন করে লোহার পাত ঢোকানো হয়েছিল।এখানও সেটি রয়েছে।বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন অমিত সাহা।আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।আবরারের লাশ হল থেকে সরাতে চাপ দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রাসেল: চিকিৎসক আবরারকে নির্যাতনকারীরা ছিলেন ‘মদ্যপ’তদন্তে পেল ছাত্রলীগ।আবরারের হলের ক্যান্টিন বয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা,তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।মামলার আসামিরাও সবাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।জবানবন্দিতে অভি বলেন, ওই রাতে ২০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে আসামিদের খাটে বসে থাকতে দেখেন, তখন আবরার কক্ষের মাঝখানে দাঁড়ানো ছিল।এরপর মুনতাসির আল জেমি (আসামি) আবরারের দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে আসে।একটি মোবাইল ইফতি মোশাররফ সকাল ও অন্যটি মুজতবা রাফিদ এবং ল্যাপটপটি মনিরুজ্জামান মনির চেক করতে থাকে।সকাল (আসামি) আবরারকে বলে, তুই শিবির করিস কি না?আবরার বলেছিল,আমি শিবির করি না,এর সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলাম না।এভাবেই আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সেই রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন আবরারের সহপাঠী অভি।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী,তারপর অন্যদের বের করে দিয়ে আবরারকে বেধড়ক পেটানো হয়,এতে ভোররাতে তার মৃত্যু ঘটে।জবানবন্দি শেষে আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু সাক্ষী অভির কাছে জানতে চান,২০১১ নম্বর কক্ষে আপনি, সাইফুল, গালিব, সৈকতসহ আপনারা গিল্টিমাইন্ড নিয়ে গিয়েছিলেন কি না?এসময় অভি নিশ্চুপ থাকেন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হৈ চৈ করে বাধাদান করলে বিচারক প্রশ্নটি গ্রহণ না করায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে চাপ দিতে থাকেন আসামিপক্ষে সাইফুল গণী টিটো, রেজাউল ইসলামসহ অন্যান্য আইনজীবীরাও সাক্ষীকে জেরা করেন।আররার হত্যাকাণ্ডের পরদিন তার বাবা বরকত উল্লাহ কুষ্টিয়া থেকে এসে ১৯ জনকে আসামি করে ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন।এক মাস পর ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান আসামিদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবংএজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।এদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন। তিন আসামি পলাতক রয়েছেন।

Leave your comments