নিজস্ব প্রতিবেদকঃসুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার “সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়” এর সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী, যুব সমাজ এবং ম্যানেজিং কমিটির সমন্বয়ে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয় মিলনায়তনে সকাল ১১ ঘটিকার সময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ রশিদ আহমদ এহসানের সভাপতিত্বে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সৈয়দ আলমগীর আহমদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন, ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বায়ক সৈয়দ শাহ কামাল চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে পূর্বের মতবিনিময় সভায় গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠান পালনের সিদ্ধান্ত নেই এবং মন্ত্রীদেরকে আমন্ত্রন জানাই।

আমরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বসে গ্রামের সকলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ২৮শে মার্চ “সুবর্ণজয়ন্তী” উৎসব পালনের জন্য কাজ শুরু করে দিলাম। তারপর থেকে প্রবাস থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের ফোন কল আসতে থাকে, যেন অনুষ্ঠানটির তারিখ পেছানো হয়। এরমধ্যে সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ প্রবাসীদের প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং প্রবাসীদের মতামতের কথা প্রকাশ করে বলেন যে, সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের তারিখ যেন পরিবর্তন করা হয়।

সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ বলেন, গত দু’বছর আগে “সুবর্ণজয়ন্তী” অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নিয়ে অদৃশ্য কারণে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। হঠাৎ করে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানতে পারলাম যে, ২৮ শে মার্চ অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমার কোন সমস্যা নেই, তবে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রবাসী ও চাকরিরত ব্যক্তিবর্গরা বলেন এত অল্প সময়ে অনুষ্ঠানটি উদযাপন করলে আমরা অধিকাংশই উপস্থিত হতে পারব না। যদি ৬ মাস সময় দিয়ে অনুষ্ঠানটি করা হতো তবে আমরা অধিকাংশই অনুষ্ঠানে শরিক থাকতে পারতাম।

তিনি উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ৫০ বছর পুর্তি অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হলো বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। যদি প্রাক্তনরা আসতে না পারেন তবে এ অনুষ্ঠানের সার্থকতা থাকবে না।

গত রবিবার সৈয়দ সালেহ আহমদ রানু, আমি (সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ)সহ চার সদস্যের কমিটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ রশিদ আহমদ এহসানকে “সুবর্ণজয়ন্তী” অনুষ্ঠান অন্তত ৬ মাস পেছানো প্রস্তাব দেন।

তিনি আরো বলেন, আপনারা যারা গ্রামের মানুষ আছেন, আপনার এখনও থাকতে পারবেন এবং অনুষ্ঠান ছয় মাস পেছালেও আপনারা থাকতে পারবেন। আমরা প্রবাসীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য উদযাপনের সময় ছয়মাস পেছানো হোক।

তিনি উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সুবর্ণজয়ন্তীর সময় ছয় মাস পেছানো হলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ রশীদ আহমদ এহসান এবং শিক্ষানুরাগী সদস্য সৈয়দ শাহ কামাল চৌধুরীকে আগামী দুইবছর মেয়াদে আবারো বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে রেখে ঝাঁকঝমকভাবে “সুবর্ণজয়ন্তী” উৎসব পালনের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, যেহতেু আগামী জুন মাসে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সেহেতু পুণরায় বর্তমান কমিটিকে পরবর্তী মেয়াদে আবারো নির্বাচন করতে গ্রামবাসীর প্রতি আহবান করেন।

তিনি আরো বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানকে স্বার্থক ও সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য প্রচুর ফান্ডের দরকার। আপনারা যদি আমাদের প্রবাসীদের কথা ভেবে ছয়মাস পরে অনুষ্ঠান করেন, তবে আমরা প্রবাসীরা প্রচুর আর্থিক সহায়তা করতে পারব, যা দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেও বিদ্যালয়ের ফান্ডে অতিরিক্ত টাকা জমা হবে।

তিনি ব্যক্তিগত মতামতে বলেন, আপনার যদি ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠান করেন, আমি হাজির থাকতে পারব কিন্তু অধিকাংশ প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে অনুষ্ঠান ছয় মাস পেছানো হোক।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ রশীদ আহমদ এহসান বলেন, আপনার সবাই জানেন বিদ্যালয়ের ক্লন্তিলগ্নে আমিসহ, সৈয়দ শাহ কামাল চৌধুরী এবং বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের গ্রামবাসীরা সবাই মিলে দু’বছরের জন্য দায়িত্ব দেন। এই ২ বছর শেষে আবারো দুই বছরের জন্য পুনরায় দায়িত্ব দেন এবং আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এই ২ বছর শেষে আবারো গ্রামবাসীরা সবাই মিলে আরো দুই বছরের জন্য নির্বাচিত করেন। ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যভাবে পালন করি যা দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পুর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা বিদ্যালয়ের সকল প্রাক্তনরা মিলে আমাদেরকে বলতেন যে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করতে চাই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করতাম। গত ২ বছর আগে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু কোন কারণে হয়ে ওঠেনি। তাই আমাদেরও একটা ইচ্ছা ছিল যে, ৫০ বছর পুর্তি অনুষ্ঠান করি।

তিনি আবারও বলেন, প্রাক্তনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমরা এ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে যে, প্রাক্তনদের (প্রবাসী) অধিকাংশই এই সময়ে অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবে না। আমি চাই প্রাক্তনদের মুখে হাসি ফুটুক কিন্তু ৪০% দের মুখে হাসি ফুটুক আর ৬০%দের মন খারাপ হোক সে অনুষ্ঠান আমরা করতে চাই না।

আমার বড় ভাই (সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ) যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সোস্যাল মিডিয়ায় যে মতামতের প্রকাশ ঘটছে তাতে দেখা যায় প্রবাসীদের বড় একটা অংশ অনুপস্থিত থেকে যায়। ফেসবুক কমেন্ট ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মত এবং অলিদ ভাইয়ের মতের ভিত্তিতে জানা যায় অধিকাংশই চায় অনুষ্ঠান ৬ মাস থেকে ১ বছর পেছানো হোক। তাই আমার পেছাতে কোন আপত্তি নাই, তবে আমার মেয়াদে ২৮ মার্চ অনুষ্ঠানটি যদি করা হতো সেটা হত নগদ এখন এটা বাকীতে পরে গেল। কারণ আর আমার এই পদে থাকার কোন ইচ্ছা নাই যিনি নতুন সভাপতি হবেন তিনি করবেন। আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

গ্রামের মুরুব্বি সৈয়দ ছালেহ আহমদ বলেন, অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে একটা যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা হোক, যাতে সকলেই উপস্থিত থাকতে পারে এবং সভাপতিকে অনুরোধ করেন আরও একটা মেয়াদ থেকে অনুষ্ঠানটি করে যেতে।

আরো বক্তব্য রাখেন, সৈয়দ জিয়াউল আহমদ, সৈয়দ আবু ছাইদ, সৈয়দ শেফুল আমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান লিলু মিয়া, সৈয়দপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, সৈয়দ কলা মিয়া, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক সৈয়দ হুসবান্নুর, সৈয়দ কলা মিয়া,সৈয়দ ছালিক মিয়াসহ আরো অনেকেই।

সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ সভার শেষাংশে বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ৮০% মানুষের মতামতের ভিত্তিতে “সুবর্ণজয়ন্তী” অনুষ্ঠান ১ বছর পেছানো হোক। তিনি বলেন, আগামী ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের সময় আজকের সভায় উপস্থিত গ্রামের সকলকে আগামী কমিটি নির্বাচনের সভায় উপস্থিত থেকে সকলকে আজকের মিটিং এর চুম্বক অংশ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও শিক্ষানুরাগী সদস্যকে পুনরায় নির্বাচিত করে প্রাণচঞ্চল একটা “সুবর্ণজয়ন্তী” অনুষ্ঠান করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা নুরুন নাহার বলেন, আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম ২৮ শে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য এখন দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মত ৫০ বছর পুর্তি অনুষ্ঠান ৬ মাস থেকে এক বছর পেছানো হোক। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য তাদের মতের সাথে আমিও একমত পোষণ করছি।

Leave your comments